- জানলে খুবই অবাক লাগবে আমাদের সৌরজগৎ — আমাদের পৃথিবী যে গ্যালাক্সির মধ্যে রয়েছে তার ছবি অর্থাৎ সেই গ্যালাক্সির যে ছবি আমরা বইয়ে দেখি তা সবই আঁকা ছবি। কারণ এখনও পর্যন্ত আমাদের গ্যালাক্সি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে কোনো যন্ত্র ছবি তুলতে পারেনি। এক একটা গ্যালাক্সি এত বিশাল যে সেটা ছাড়িয়ে চলে যাওয়া খুব দুঃসাধ্য।
- আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগেকার মানুষ আজকের ধ্রুবতারার জায়গায় থুবান (Thuban) তারাকে উত্তর আকাশে দেখতে পেতেন।
- পৃথিবীর আহ্নিকগতি এবং বার্ষিকগতি ছাড়াও আরো একটি গতি আছে যে কারণে আকাশের ধ্রুবতারার এই পরিবর্তন ঘটে। একটা লাট্টুকে ঘুরন্ত অবস্থায় ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সেটি ঘুরতে ঘুরতে সামান্য একটা বৃত্তাকার পাক খাচ্ছে; পৃথিবীর ক্ষেত্রেও এইরকম একটি গতি আছে যেটি সম্পূর্ণ হতে 26 হাজার বছর লাগে।
- আমরা যে অক্ষাংশে দাঁড়িয়ে ধ্রুবতারাকে দেখি সেই অক্ষাংশের মান এবং ধ্রুবতারার উন্নতিকোণ-এর মান – এই দু'টি এক হয়। যেমন, আমরা যদি উত্তর গোলার্ধে ২৩ ডিগ্রি অক্ষাংশে দাঁড়িয়ে ধ্রুবতারাকে দেখতে চাই তাহলে আমাদের ভূমি থেকে আকাশে ২৩ ডিগ্রি উঁচুতে ধ্রুবতারাকে দেখতে হবে।
- যে দিনগুলোতে সম্পূর্ণ চাঁদ দেখা যায় না শুধু এক ফালি চাঁদ দেখা যায় তখন কি করে শুক্লপক্ষ বা কৃষ্ণপক্ষ বোঝা যাবে।চাঁদের ফালির যদি বাঁ দিক অন্ধকার থাকে অর্থাৎ বাঁ দিকটা খাওয়া অবস্থায় থাকে তাহলে বুঝতে হবে শুক্লপক্ষ চলছে। আর যদি ডানদিক অন্ধকার থাকে অর্থাৎ ডান দিকটা খাওয়া অবস্থায় থাকে তাহলে বুঝতে হবে কৃষ্ণপক্ষ চলছে।
- বিভিন্ন সময় শো দেখাতে গিয়ে অভিজ্ঞতা হয়েছে যে বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা আছে টেলিস্কোপ বা নিদেনপক্ষে বায়নোকুলার না থাকলে আকাশ দেখার আনন্দ নেই। আমি এখন খালি চোখে, বাইনোকুলার দিয়ে আর টেলিস্কোপের সাহায্যে আকাশ দেখা নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করছি।
খালি চোখে আপনি উত্তর গোলার্ধে প্রায় ২৫০০ থেকে ৩০০০ তারা দেখতে পাবেন।
এক জীবনে এরই বৈচিত্র আপনি শেষ করে উঠতে পারবেন না
টেলিস্কোপ দিয়ে দেখলে অবশ্যই এই সংখ্যা অনেকটা বাড়বে এবং তুলনামূলক বড় দেখাবে। কিন্তু আপনি যদি শখ করে আকাশ দেখতে চান তাহলে টেলিস্কোপ দিয়ে আপনি ততটা আনন্দ পাবেন না যতটা খালি চোখে দেখলে পাবেন। এর মুখ্য কারণ হচ্ছে টেলিস্কোপের ফিল্ড অফ ভিউ (FoV) কম অর্থাৎ খুব কম জায়গা আপনি দেখতে পাবেন ফলে আপনাকে ক্রমাগত টেলিস্কোপ এর অভিমুখ পরিবর্তন করতে থাকতে হবে। এক্ষুনি আপনি একটা তারাকে যে জায়গায় দেখলেন মিনিট ৩-৪ এর মধ্যেই সেটা আপনার টেলিস্কোপের লক্ষ্যের বাইরে চলে যাবে। ফলে ঐ তারাটিকে দেখতে হলে আপনাকে ক্রমাগত টেলিস্কোপ ঘোরাতে থাকতে হবে। শখের আকাশ দেখার জন্যে এটা আপনার ভাল লাগবে না। এছাড়া বড় নক্ষত্রমন্ডলী আপনি টেলিস্কোপের সাহায্যে দেখতে পারবেন না কারণ এর FoV কম। তবে সুবিধাও আছে। আপনার যদি নিকটতম গ্যালাক্সি দেখার ইচ্ছা হয় তখন টেলিস্কোপ লাগবে। Galaxy বিশাল হলেও পৃথিবী থেকে এত এত দূরে যে সেটা আপনার টেলিস্কোপের FoV এর মধ্যে ধরে যাবে।
এবার বাইনোকুলার। বাইনোকুলার দিয়ে দেখলে আপনি খালি চোখের চাইতে সামান্য কিছু বেশি তারা দেখতে পাবেন। এটা বিশেষ বড় কথা নয়। আলোকিত অঞ্চলে বাইনোকুলার দিয়ে দেখলে আপনি আকাশ একটু পরিষ্কার দেখতে পাবেন। এবং যে তারাগুলো খুবই অনুজ্জ্বল সেগুলো আপনি তুলনামূলক ভালোভাবে দেখতে পারবেন। আর বাইনোকুলারের FoV বেশি, ফলে আপনাকে ক্রমাগত বাইনোকুলার এর অভিমুখ পরিবর্তন করতে হবে না। আপনি অনেকক্ষণ ধরে একইভাবে আকাশ নিরীক্ষণ করতে পারবেন। তবে এই বাইনোকুলার কিন্তু খুব ভারী হয় ফলে আপনি অনেকক্ষণ হাতে ধরে থাকার পর আপনার হাতে যন্ত্রণা করতে পারে। সেটা আপনাকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বিস্তারিতভাবে বললাম। আপনার পক্ষে যেটা সুবিধাজনক সেটি আপনি প্রয়োজনমত বেছে নেবেন। পরিশেষে আবারও বলি, খালি চোখে আকাশ দেখা, নক্ষত্র চেনা, গ্রহ চেনা যথেষ্ট আকর্ষণীয়।